আমাদের সম্পর্কিত
“বর্ণপর্ণরিচয়” থেকে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা শুভ নববর্ষ জানাতে “Happy Bengali New Year” এ গিয়ে থামবে তা বিদ্যাসাগর মশাই কোনোদিন ভেবেছিলেন কিনা জানা নেই।এই বছরটা বেশ কিছু কারণে খুব উল্লেখযোগ্য।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশতবর্ষ। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশতবর্ষ। বিমল করের শতবর্ষ। চিত্র পরিচালক চিদানন্দ দাসগুপ্ত ও হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের শতবর্ষ।আরেক বিস্রিত প্রায় বাঙালি রাধাপ্রসাদ গুপ্ত ওরফে শাটুলবাবুর শতবর্ষ।
এমনিতেই বাংলা ভাষা “Second class citizen” দুয়োরানী। বাংলা ভাষা সাহিত্য নিয়ে পড়লে ছাত্র ছাত্রীদের বিস্তর প্যাঁক খেতে হয়। বাংলা মিডিয়াম এ পড়লে তো আবার কর্পোরেটে চাকরি করাও দুঃসাধ্য ব্যাপার বলে জানলাম। তবে নববর্ষ এলে আমাদের বাঙালি সত্বা খানিক জেগে ওঠে। নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। সারা বচ্ছর বাংলা ভুলে গিয়ে হঠাৎ বাংলার কি হবে গো বলে পায়জামা পাঞ্জাবী শাড়ি বেলফুল আতর মেখে হ্যাসট্যাগ বং লিখে ফেবু মাতিয়ে দি। ওদিকে হুতোম চোখ টিপে হাসতে থাকে।
বাংলাতে এখন অনেক হিন্দি শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এর ফলে অনেক আঁটপৌরে শব্দ আমরা ভুলতে বসেছি। ভাষা সন্ত্রাসে কোণঠাসা “আ মরি বাংলা ভাষা”। আবার এটাও আমাদের ভেবে দেখতে হবে বাংলা ভাষারও বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ বা প্রয়োগ রয়েছে। যেমন রাঢ় বাংলার ভাষার ব্যবহার বা “Dialects” এবং কলকাতার বা Urban বাংলা ভাষার মধ্যেও যথেষ্ট তফাত রয়েছে। বাংলা ভাষার এই আঞ্চলিক রুপের “Plurality” কেও আমাদের মান্যতা দিতে হবে। যদি না দি তাহলে সেটাও পরোক্ষ ভাবে ভাষা সন্ত্রাসেরই সামিল। তা বাংলা ভাষার “Eliticism” কেই চিহ্নিত করে।
বাংলা ভাষার বিন্যাসে আগামীদিনে আরও বদল আসবে।ভিন্ন ভাষামুখ গড়ে উঠবে।
কিন্তু বাংলা ভাষার বোধ সামূহিক চেতনা প্রান যেন অটুট থাকে। বাংলায় দেখি স্বপ্ন করি বাংলায় হাহাকার সব দেখে শুনে বাংলায় চিৎকার করে নিজের আত্মাকে যেন প্রকাশ করতে পারি। এই ভাষাকে লালন ও যাপন এর দায়িত্ব আমাদেরই। না হলে ভাসা ভাসা (ভাষা) জেনে কোথাও পৌঁছোতে পারবো না আমরা। বাংলা “Subject”টা যতদিন না ইংরাজিতে পড়ানো শুরু হচ্ছে ততদিন আমরা রোয়াকে আড্ডা দিতে থাকি। ভাষার “সহজ পাঠ” এর ভেতর আমাদের দেখা হয়ে যাক এই নববর্ষে। রোয়াকে জমে উঠুক যুক্তি তক্ক ও গপ্পো ।