দ্বিতীয় বর্ষ ✦ প্রথম সংখ্যা
কবিতাঃ ১
মিডিয়া
রঙ্গীত মিত্র
মাদাগাস্কায় জল নেই।
কেনিয়ায় নদী থেকে ভেসে আসছে
মৃতদেহ।
প্রত্যেকটা সাইরেন অ্যাম্বুলেন্সের মতো লাগে
এলার্মের আওয়াজ যেন কারফিউ-এর ডাক।
আমাকে ভাল লাগে না বলে, চন্দ্রগ্রহণ হয়
র্যাম্বো আর জ্যাকি চ্যান
রুরাল সচ ভারত প্রোগ্রাম নিয়ে কথা বলে চলেন।
মিডিয়া নিদ্রা দেয়।
চোখ টিপে টিপে দেখে।
মানুষ
রঙ্গীত মিত্র
পতঙ্গদের রোগ হচ্ছে বায়ুদূষণের জন্যে।
পারদ বেড়ে গিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করছে।
আমার কাশি অনেকদিন থামেনি।
শুধু তোমার সঙ্গে দেখা করার কয়েক ঘণ্টা
এ যেন সিরিয়ালের মধ্যে আছি।
আপাতত ছয় মাসের অপেক্ষা ।
বন্ধুত্ব নামক প্রেমের সূচিপত্র।
কত মানুষ হারিয়ে ফেলেছেন এদিক ওদিক
অথচ আমরা আজো মানুষ হতে পারিনি।
কবিতাঃ ২
ছায়ার ভাষা ও ভেঙে ফেলা বিজ্ঞাপন
নীলাব্জ চক্রবর্তী
লংশট
খুব ঘন হলে
কথোপকথন
মানে
এই ডে ফর নাইট এখন বদলে যাবে
একটা ফ্যালাসি অর্থে
যেভাবে
কথা বলতে থাকা
এইসব
ছায়ার ভাষারা কিছু গান হয়ে
একজন স্মৃতি
ভাঙতে ভাঙতে
বিহাইণ্ড দ্য সিনস
প্রতিটি পর্দায়
একটাই বিজ্ঞাপন বাজছে…
কবিতাঃ ৩
শানু চৌধুরী
পৃথিবীর ঘ্রাণ থেকে নেমে এল দেবদাসী পাখা
আমাদের পথ শেষে ,স্যালোর নিচে নিভে যায়
বিকেলের সেই প্রহরী কুকুর ,তুলনাহীন কর্নেট
আলস্যের এক চিরাচরিত প্রথা, নৌকোর ভিতর প্রজাপতি ছেড়ে দেওয়া! সে ভাসে,কখনো ডুব দেয়
মাঘের সমবেদনার ছালে জড়ায়, নিরীহ বর্ণ
এসব দেখে ভাবি, বুঝি কোথাও ভেঙেছে গ্রাম
আমাদের বক্তব্য নিয়ে কেউ চলে গেছে ঘরে
অন্দরমহল ছেয়েছে নারীর সুগন্ধি চুলে…
প্রচণ্ড ধোঁয়া হয়। রঙের পাপোশ থেকে
ছিঁড়ে আসে,জনপদের সামান্য বুলি…
তখন মনে পড়ে,একদা কপিকল ছুঁয়ে
কেউ নিতে চেয়েছিল জলের সামান্য স্বাদ
মনস্বী নামের মাহাত্ম্যে
আমাদের মাঝে কোনো উৎকোচ নেই
সামান্য অন্ধকার হয়ে এলে দেখি,
কারো মাথা চলে গেছে বিপুল হাওয়ায়
তোমাদের উপোস ধোয়ার মতো মিলিয়ে যায়
হাতের পাঁচ আঙুল থেকে ছন্নছাড়া হয়
ছাদ দেওয়া ঘর-বাড়ি আর মানুষের কালি
আসনপিঁড়ি করে বসে আছে হৃদয়ের ঠাকুমা
ধুলো এসে পড়ে তার ভাতের থালায়…
শীত চলে যায় যখন মনস্বী নামের মাহাত্ম্যে
জোৎস্না ও শ্যামলীর হাসি নিয়ে
শামশের কেবল কবিতা লিখতে জানে
দুর্বোধ্য হাসিকে স্থাপত্য বানাতে জানে সে
আমি কিছুই জানি না,তালকানা লোকের মতো
চিরকাল বিষণ্নতাকে দেখি,দেখি সমাধির ওপর
পড়ে থাকা এক আন্দাজহীন নোলকের ভার
এদিকে গোলাপের ঘ্রাণ ভারি হয়
মরে যায় উইপোকা ছেয়ে ফেলা গাছ
তাহলে বলো, আমি কিভাবে তোমাদের কাছে যাবো!
বাগানের ফুলগুলোকে দেখি। শুকিয়ে যাওয়ার আগে অপেক্ষা করি,নবীকরণের। অথচ ইভার পায়ের শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়। বিবর্ণ হয়,তাদের সমস্ত নরম মুখ। এভাবে দুঃখ পেলে,ফুলগাছ একা হয়। খলখলে হাসির ভিতর মূর্ছা যায়,দাস্তান। আসলেই আমি চাই,স্বাভাবিক, উপভোগ্য পথ। ঈশ্বরের কাছে পৌঁছতে সহজ পথ। তাও-এর মতো এক সাধনা ফুলেরও আছে। আছে একেকটা উদযাপন প্রক্রিয়া। তবে বলি,আমার কৌতূহল আমাকে তাড়িয়ে মারছে। বলছে, অস্তিত্ববান প্রতিটা প্রাণ কিসের ফল? পাখির গান আজকাল ভালোলাগে। তারও এক আবেদন আছে! আছে তার প্রেমাস্পদ যাতায়াত। এইতো সেই বিশুদ্ধ প্রপঞ্চ, খেলা করছে আর জানালার দিকে তাকিয়ে আসন্ন সন্ধ্যার ভিতর গাছগুলোকে ডুবে যেতে দেখছে ইভা। একটা লিকলিকে কালো ছড়ি নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মিলিয়ে যাচ্ছে মনসুর…আপ্যায়নের বিষয়টিকে নিয়ে তখন আর কষ্ট হচ্ছে না কারো…
কবিতাঃ ৪
মাকড়সা
পিন্টু পাল
কোনো পার্থক্য খুঁজে
পাই না তোমার আমার
তুমি জাল বানাও ঘরে ঢোকার জন্য
আমি ঘর বানাই জালে পরার জন্য
তাই প্রতিরাতে
এককোণ থেকে আরেককোণে মিশে যায়, পরস্পরে
বন্ধু, বিদায়
পিন্টু পাল
তোমাকে বিদায় জানাতে আমার
কেঁপে কেঁপে ওঠে ঠোঁট
শ্রাবণের মেঘের মতো চোখ
প্রেমিকের দুঃখ লুকিয়ে
একা একা কাঁদে
নাও আজ ; যা নেবে আমার
আমি এক নিহত শিকড়
যাকে শূন্য করে নদী
নিয়ে যায় বহুদূর…
সংশয়
পিন্টু পাল
জীবন বিঁধে থাকা কাঁটার মতোন
ভীষ্মযন্ত্রণা কিংবা চুম্বনট্রিগার
আর মাঝখানে
ভয়াল চিৎকার
কবিতাঃ ৫
চলে গেছে তারা
ফটিক চাঁদ ঘোষ
চলে গেছে যারা কাল নদীর কিনারা দিয়ে সমুদ্রের দিকে
ঢেউয়ে ঢেউয়ে লুটোপুটি জল ডেকে নেয় তাকে আঁকে বাঁকে
আমার স্বদেশ জানে,জানে প্রিয়জন সব বাতাসের বাঁশি
বেজেছিল কবে যেনো মটরের খেত জুড়ে চাষাদের হাসি
লক্ষ্মী যেনো পরিপূর্ণ আমার হৃদয় জুড়ে সোনালি বাতাস
রোদমাখা কুয়াশা বা আলিসায় ঠেস দিয়ে রাখা দীর্ঘশ্বাস
কথা ছিল টব জুড়ে গাঁদা ফুল হলুদ হলুদ পাবে শোভা
শীতের সর্ষের খেত ডেকে নেয় বুকে তার সুধা মনোলোভা
ফিরে এসো মিঠু ডেকে এনে পুতুল পুতুল খেলা গোধূলির
চিরকাল চিরদিন থাকে যেনো তারপর রহস্য তিমির
কাজল পরাবো চোখে ঠোঁট দিয়ে এঁকে দেবো কপালের টিপ
অবাধ্য অলক গুচ্ছ দুহাতে সরিয়ে দিয়ে জ্বালাবো প্রদীপ
চলে গেছে তারা সব তুমি এসো আঁধারের জোনাকির আলো
অকৃতজ্ঞ কিশোরীরা একবার তুমি বলো বেসেছিতো ভালো।।
ফেরিওয়ালা
ঝড়ের খেয়ায় চেপে স্বপ্নসন্ধানীর মতো দেশে দূর দেশে
খুঁজেছি ঘাসের দানা, কণা শিশিরের সবুজ অবুঝ তাজা
ফেরিও করেছি তোমাদের কাছে তার কিছু বৃষ্টি ভেজা রাতে
যদিও প্রতিশ্রুতির রেশ দিনের আলোয় উদ্ভাসিত ছিল
তবুও ব্যর্থতার এদিন বলে দেয় আরো বেশি কিছু ,নয়
নয় নয় নয় কিছু নয়। দিতে চেয়েছিলাম যেকিছু নীল
বিষে ভরা আজ নষ্ট। ফেরৎ চেয়েছি তাই স্বপ্ন প্রতিশ্রুতি
প্রত্যাঘাত হানো আজ। ঘৃণা করো বিশ্বাসঘাতকে গূঢ় তীব্র
আমার সেদিন ছিল চৈত্রের বসন্ত কৃষ্ণচূড়া দখিনার
আমার এদিন এলো বিদ্রূপের কালো রাত নিন্দা প্রস্তাবের
ভগ্নস্তূপে জমে আছে ঋণ। বৌদ্ধস্তূপে দীপ নিভে গেছে আর
কৃষকের লাশ নিয়ে শুধু আমার কবিতা বিনাশের পথে
চলে।পাথরের মতো ফলহীন অন্ধকার দেয়নি জন্ম কোনো
নতুন শপথ তাই ক্ষমা চেয়ে আজ লীন হয়ে যাই রাত।।
কবিতাঃ ৬
ঘুম অথবা ঘুমন্ত বেদনা
অর্ঘ্য কমল পাত্র
১
একটা রঙ ছড়িয়ে পড়েছে আকাশে। আর আকাশ ছড়াচ্ছে আরেকটা রং। দ্বিধা থেকে ভীত আমি, শুধুই বসে বসে দেখছি দীঘির জলের রঙিন পোষাক। এবং ক্রমশ বুঝছি— স্বপ্ন কীভাবে পাল্টে যায় সময়বিশেষে…
২
কোনো স্বপ্ন নয়৷ ঘুমের ভিতর কেবলই ঘুমোতে চেয়েছি। কেবল চেয়েছি — আমার দরজা, যাতে তোমার দিকে টানা না হয় কোনোদিন। হয়তো এই চাওয়াটাই একটা স্বপ্ন, দুঃস্বপ্নের মতো৷ হয়তো এই স্বপ্নের কথা চাঁদ জানে
কিন্তু ঘুম ভেঙে, কোনো সকালেই চাঁদকে দেখতে পাই না বলে, আমার জানা হয় না কিছুই…
৩
এখনও আমাদের জানা হয়নি, আমাদের ঘুম আদৌ ভাঙবে কী? আদৌ এই ঘুম কি আমাদের বেদনা মুছিয়ে দিচ্ছে?
মাঝে মাঝে রাগ হয়। রাগ, হয় মাঝে মাঝে। খিস্তি করি কোলবালিশকে।বঅথচ, ওকে ছাড়া আঁকড়ে ধরার আর কেউ নেউ৷ কেউ নেই, কষ্টকে লাঘব করার!
৪
ভালোবাসা কিছুই নয়৷ কিছুই হয় না ভালোবাসা দিয়ে। চিন্তায়, দ্বিধায় শুনেছি ঘুম হয় না, ভালোবাসা থাকলে…
তাই আমি ভয় পাই। ভয় পাই ভালোবাসাকে। সত্যিই কি কিছু আছে ভালোবাসা বলে? নাকি এই বেঁচে থাকা, কেবল এই বেঁচে থাকার জন্য কিছু একটা করে চলা উত্তেজনাপূর্ণ?
কবিতাঃ ৭
দুটি কবিতা
শীর্ষা
১
রাতের কান্না দিয়ে ঘুমের ট্যাবলেট গিলছে
রোজ যে নারীটি, তার গালে বিষণ্ণতার
বহু পুরোনো ছ্যাঁকা। অন্ধকার দেখছে
আশ্চর্য বিষণ্ণতার সুদীর্ঘ বারান্দায় দাঁড়িয়ে
একটি বহুবর্ষজীবী জোনাকি কীভাবে
জ্বলছে
আর
নিভছে,
জ্বলছে এবং নিভছে,
ফ্লুরোসেন্ট মায়ার জাদুবাস্তবতা মেখে।
২
প্রশান্ত মাঠের শরীর জুড়ে হাওয়ার গোঙানি
ঘুরে ফেরে – একটি ফসলি মা যেভাবে
কাস্তের ধারালো দ্বারা একা হয়ে ওঠে ক্রমশ।
নিছকই একা। হাওয়া তখন প্রতিবেশী কাকিমা;
মায়ের দরদ কিনে নিচ্ছে মাসির ছদ্মনাম,
বিনামূল্যের কাগুজে স্তোকে ভারী হয়ে উঠছে
দিগন্তের অবিন্যস্ত ছায়া
কবিতাঃ ৮
মানস ব্যানার্জী
পরবর্তী সেকেন্ড থেকে শুরু , মাস্টারস্ট্রোক
গুরু- শুধু ছক
এই অঙ্কে প্লাটফর্ম পরিবর্তন করছ
ট্রেন । তারপর যে যার নিজের
যাত্রী । গন্তব্যস্থল আলাদা আলাদা । তুমি
যেন এক বিন্দুর ভূমিকায় । চুপচাপ
সময় চলে যায় । চলে যায়। এ প্রান্ত
থেকে ও প্রান্ত। দর্শক একটি শিবমন্দির তার
ভক্ত সমাগম।সন্ধ্যা আরতি ।
শান্ত থেকে আরও শান্ত
হয়ে যাচ্ছে যে সমস্ত পুকুর
চুপচাপ নিস্তব্ধ নিষ্পলক দুপুর
বেলা ছেলেপুলেদের হাঁকডাক নেই
এমন পৃথিবী এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে
বসে আছে তার রঙ লাগা হেমন্ত
ঋতু সঙ্গে শোয়েটার হুলভুল সব
ছু : ফুৎকার !
কবিতাঃ ৯
অনুষ্কা আচার্য
রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে আমি
দেখেছি রঙীন মানুষের দল হেঁটে চলে যায়।
দেখেছি উৎসব বাড়ী,আলো, হাসি, মন্ত্র :
‘আমার হৃদয় তোমায় উৎসর্গ করলাম,
তোমার হৃদয় আমার হোক’…
তুমি, আমি, সাদা-কালো হাত ধরাধরি করে থাকি।
রাত বাড়লে তোমায় জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে,
আজ কেমন আছো?
জ্বর আসছে কিনা? আর,
সেই মেয়েটিকে পেলে? যাকে গত জীবন থেকে খুঁজছিলে।
ভোরের দিকে স্বপ্ন দেখি,
রাস্তার একপাশে সাদা-কালো, আমি, তুমি ঘর করে থাকি
ওপাশে রঙীন মানুষ গান গেয়ে দূরে চলে যায়।
“অর আহিস্থা কিজিয়ে বাতে, ধড়কনে কোয়ি সুন রহা হোগা…” কে যেন শুনিয়েছিল প্রথম? কিছুতেই মনে পড়ে না তার নাম। অথবা সবই মনে পড়ে কিন্তু, আড়াল করে যাই। যা কিছু অসম্ভব, মন শুধু তাই চায়। মন চায় কাঁচের বাক্সে রাখা কোহিনুর। দূর থেকে দেখতে সুন্দর লাগে, কাছ থেকে দেখলে মোহিত হতে হয়। হাত বাড়ালেই সাইরেন বেজে ওঠে! কেউ শুনতে পায় না, আমি পাই। খবরদার! ওটা তোমার জন্য নয়। হাত বাড়িয়েছো যখন এবার জরিমানা দাও? খুব সামান্যই জরিমানা। মাটিতে নামিয়ে রেখে তোমার হৃদয়, ফিরে যাও চুপি চুপি। আর পিছন ফিরে তাকাবে না কক্ষনো।
কবিতাঃ ১০
কলকাতা আমি এখনো বেঁচে আছি
প্রণয় দাস
শান বাঁধানো দীঘির ঘাট ও সমুদ্র এক নয় কলকাতা !
বোতাম টিপে প্রথম ভোট দিয়েছি তখন আমি একুশ
এখন আমি তপশীল-পয়ত্রিশ ও একরকম বেকার।
বাবার সম্পত্তি বলতে বিঘে কয়েক জলা জমি আর ভিটেমাটি।
আমি ঘরে ফিরিনি বহুদিন, মুখ দেখিনি মায়ের
বন্ধু বান্ধব আত্মীয় পরিজনেরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ একে একে
চৌরাস্তার মোড়ে কুকুরটাও ঘেউঘেউ করে তেড়ে আসে আজকাল
বেসরকারি কোম্পানিতে দিনমজুরীতে দুবেলার অন্ন জোটে মোটে।
ডিগ্রি বলতে কিছুই নেই, ইংরেজি অনার্স ও
উনিভার্সিটির মাস্টার্স ডিগ্রী সার্টিফিকেট ও বি এড পাস মাত্র
এম.ফিল. টাও করেছিলাম হয়তো, তারপর তো
অনিমেষ বলেছিলো রাজনীতির ডিগ্রিটা নিয়ে নিতে।
নেওয়া হয়নি কথায় কথায়। অনিমেষ গলায় ফাঁস দিয়েছে বহুদিন
বৈশাখী বাড়ি গিয়েছিলো চব্বিসের ভোটে ___আর ফেরেনি
চিনু অর্থাৎ চিন্ময় স্টেশন বাজারে বেশ নাম করেছে
প্রশংসার্থেই শোনা যায় চপ নাকি সে ভালোই ভাজে ।
মৃনাল নাকি বিয়ে করেছে থাকছে পাটনায় আমা্র মাথার
চুল পাক ধরেছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সরকারি দপ্তর
কেননা আমি আমাতে তপশীল-পয়ত্রিশ
অনিমেষ, বৈশাখী, চিনু ও মৃনাল _ এদের কেউ মনে রাখে না।
শান বাধানো দীঘির পারে তাদের স্বেত-মূর্তি বসে না
মোমবাতি মিছিল বসে না কোনো সিংহ মূর্তির সামনে,
তারা বেকার, প্রতিবাদহীন শব্দহীন নীরব আমিও
একদিন বিলীন হয়ে যাবো কেননা আমিও কলকাতা বুকে বেঁচে আছি নেহাতই বেকার।
কবিতাঃ ১১
স্নেহা রজক দাস
(1)
এখন শহরে ঘোলাটে সন্ধ্যে নামে
হলদু আভা লালের সাথে নীলের প্রান্তে মেশে
ঠিক যেমন ছাদের পশ্চিম দিকের দৃশ্য….
শেষবারের মতো কবে যেন দেখেছিলাম?
(2)
এখন দিনের স্বচ্ছ গোছানো শোভা বড়ো মেকি লাগে
মনে হয় চারপাশ চোখ ধাঁধানো আলোয় ঢাকা, একটু বেশি’ই ঝলমলে !
বাতাস সিক্ত ভীষণ
অথচ , আমি তো ঔজ্জ্বল্য ভালোবাসি !
(3)
এখন রাত নামার আগের মুহূর্ত টাকে,
ছাদে আটকে থাকা ঘুড়ি’টার মত’ই,
আগলে রাখতে ইচ্ছে করে ।
ইচ্ছে করে বহুদিনের শুষ্ক বাতাসকে হাতের মুঠোয় নিয়ে বলি,
“তু মি কি সন্তুষ্ট নও আর
এ ভু বনে কত চমৎকার
বাসাবাড়ি…
নদীতে দেবে না কেনো পাড়ি?
মনে মনে…
কেন বা যাবে না দরূ বনে?
পাতার আড়ালে
কেন বা যাবে না ডালে ডালে?”
করুণ গলায় বলতে ইচ্ছে করে –
“এবার ফেরার সময় কাঠগোলাপের গন্ধ এনো !
বাড়ি ফিরতি পাখিগুলোর মন ভালো হয় এ’গন্ধে ,
আর আমার …..
অল্প হলেও এনো , লক্ষীটি !”
কতদিন কেটে গেলো, রাতের আকাশ চোখ ভরে দেখিনি পর্যন্ত!
অথচ ,চোখ বজু লেই শুনি তারা গুলো মনখারাপে’র গল্প বলে।
আমারও মনখারাপ হয়ে যায় হঠাৎ’ই ।
(4)
থেকে থেকে স্নিগ্ধ , শীতকাতু রে কোন এক সন্ধ্যার স্মৃতি ভেসে আসে আবছা ।
গাঢ় ছাই রঙের আকাশে সবে চাঁদের আলো ফু টছে …
কিছু’র অপেক্ষায় জোনাকির দল ছাদের কার্নিশে মখু মেঘলা করে বসে …
সেই জোনাকিআলোয় গত ডিসেম্বরে কার যেন ছায়া দেখেছিলাম ! মনেও পড়ে না ।
শুধু অনভু ব করেছিলাম , উষ্ণতা বেড়ে গেলো বুঝি খানিকটা।
বুঝেছিলাম —
শীতে কিছু কিছু সন্ধ্যের আবহাওয়া বদলে যায় হঠাৎ’ ই।
(5)
মনে পড়ে অল্পদিনের পরিচিত এক মজার শব্দ , ‘ মায়া ‘ ;
যার ব্যখ্যা কোন বইয়ে পাওয়া যায় না , পাওয়া যায় না কোনো সংবাদপত্রেও।
অথচ , আমি তাকে রোজ খুঁজি কবিতার পাতায় , গল্পে , উপন্যাসে।
খুজঁ তে খুজঁ তে ক্লান্ত হয়ে এলে নামিয়ে রাখি যত এলোমেলো ভাবনা ,
অবঝু আমি নিজেকে বোঝাই –
“আবহাওয়া এক’ই থাকে , আভাস পাল্টে যায় কেবল । যা শুধু মায়াময় মানষু বোঝে ।
সুতরাং এ’সব তোমার জন্য নয়। “
(6)
কে যেন বলেছিল বহুদিন হল ,
” মায়া আসে মায়ার শহরে ,
অপেক্ষা করতে হয় অনেক ….
নীলাভ সন্ধ্যা স্নিগ্ধ হয় ধীরে ধীরে ।”
এমন দিন এলে জমা রাখি মনখারাপ যত। মনে পড়ে যায় মায়ামাখা একটি পুরুষালি ছায়া ; যা স্বচ্ছ ছিল না
কোনোদিন’ই , অথচ আবছা হল না বিন্দুমাত্র ।