তৃতীয় বর্ষ ✦ প্রথম সংখ্যা✦ কবিতা
সুগন্ধি
মিঠু নাথ কর্মকার
বাবার উদলা পায়ে ক্লান্তির ধুলো ভেঙে সন্ধ্যা নামলে
মা তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বালায়
উঠোন জুড়ে ঘামের সুগন্ধি মঁ মঁ করে ওঠে।
আমরা সম্মোহিত হই।
পায়ে পায়ে পৌঁছে যাই বাবার চলৎশক্তির চক্রবূহ্যে তৃতীয়
করাপড়া ফিনফিনে হাত পিঠ বেয়ে মাথা ছুঁলেই
বটগাছের ঘেরাটোপে এলিয়ে দিই অর্জিত সমস্যার জট
মৃদুমন্দ বাতাসে দুলে দুলে পাঠ করি জীবনের ধারাপাত।
এখন, আমাদের শাহরিক উপত্যকায় কোনো বটগাছ নেই
উঠোনহীন বহুতলে তুলসীতলাও অনুপস্থিত
এখানে এখন আর সন্ধ্যা নামে না,
নিয়নের বাতি জ্বললেই বয়সের গিঁট খুলতে খুলতে
সুগন্ধির বুদবুদের ভিতর আমি ঘামের গন্ধ খুঁজি…
তিনটি কবিতা
শিবু মণ্ডল
ইচ্ছেপুরাণ
চা, আদরের চা ফুটছে তোমার হাতে
ভোরের ছাদে এসে বসে কপোত কপোতী কখনও কখনও
আমাদের কোনও ছাদ নেই- তবুও বন্ধু আমরা!
দু’চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অপেক্ষাসমগ্র
খাদ থেকে খুব বেশি দূরে নই
আঙুলের স্পর্শ ভুলে আছে বিরহগান
তুমি কি মিথ তুমি কি আমার গল্পকথা,
দেহ থেকে উঠে আসা নৃত্য ভঙ্গিমা?
নাকি, আমারই মন থেকে উঠে আসা
না ফুরানো এক ইচ্ছেপুরাণ…
শাশ্বত স্নেহ
তোমাকে নশ্বর বলে জানি না, মানিও না
অথচ এক সাপের অরণ্যে হেমন্তশরীর, দেখি
শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে ওঠানামা করে।
ওঠাপড়া দেখে ফিরে ফিরে আসো এক ক্লান্ত নদীর পাড়ে
দ্বিখণ্ডিত নৌকা সেই কবেকার বাঁধা দুইপারে
মাঝি মাঝি ডাক তুলে বয়ে যায় নদী…
শিহরিত হতে হতে বয়ে চলেছে অবারিত জল
তার একপ্রান্তে বসে আছে এক মা
শুকনো পাপড়ি ছড়িয়ে
অস্থির ভেজা আঁচলে সন্তানেরা খেলছে তাঁর
খেলতে খেলতে খুঁজে চলেছে শাশ্বত এক স্নেহের সংকলন!
স্বপ্নঢেউ
গতরাতে স্বপ্ন তার জিভ দিয়ে আমার বুক চেটে গেছে
সারাদিন যেসব কামনা, ঈর্ষা ও দ্বেষজনিত সম্পর্ক
আমি অর্জন করেছি; স্বপ্নের জিভ সেইসব স্বাদ নিয়ে
আমাকে ফেলে রেখে গেল শূন্য করে ভোরের কোলে
তোমার হারমোনিয়াম থেকে তখন সুর ঝরছে শেফালি ফুলের মতো
রঙ নিয়ে আমি খুব বিচলিত নই যতটা গন্ধ নিয়ে
প্রতিটা স্বপ্নের আলাদা আলাদা গন্ধ থাকে সম্পর্কের মতো
স্বপ্নে কোনও সম্পর্ক আসে ঘনিষ্ঠ হয়ে
কোনও সম্পর্ক দূরে সরে যায়
জলের উপরিতল দেখে কখনো ভেতরের ঢেউ বোঝা যায় না
রাতের অন্ধকারে ঢেউয়ের ধাক্কা টের পাই শুধু