তৃতীয় বর্ষ ✦ দ্বিতীয় সংখ্যা ✦ গল্প
কন্ডাক্টর
পূষণ ভট্টাচার্য
আজ থেকে বছর কুড়ি আগের কথা হবে ।
আমি তখন হুগলী আর বাঁকুড়া জেলায় কাজ করি একজন সেলস্ রিপ্রেসেন্টেটিভ্ হিসাবে ।
কোম্পানির কাজে আমাকে প্রায়ই যাতায়াত করতে হত আরামবাগ থেকে বিষ্ণুপুর , বাঁকুড়া তে ।
আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ত বহুদিকে । কামারপুকুর , জয়রামবাটী , ওন্দা , পারা , বাঁকুড়া , বিষ্ণুপুর … জমজমাট থাকত সারাক্ষণই বাসস্ট্যান্ডটা ।
সেলস্ রিপ্রেসেন্টেটিভ্ ; কাজেই মাস কমুনিকেশনটা আমার কাজের একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল । দীর্ঘদিন যাতায়াত করতে করতে মুখচেনা থেকে পরিচিতি হয়ে গিয়েছিল অনেক বাস কন্ডাক্টর এর সাথেই ।
সুখ দুঃখের কথার মাঝে কায়দা করে দু-একটা আয়ুর্বেদিক মলম বা ব্যথার তেল চালানো … পুরোপুরি নিজের স্বার্থেই ছিল সেই পরিচিতি , তা বলাই বাহুল্য ।
কিন্তু ওদেরই মধ্যে একটা বুড়ো কন্ডাক্টর ছিল ভারী অন্যরকম ।
না ‘অন্যরকম’ কথাটার মধ্যে দিয়ে আমি কন্ডাক্টরদের শ্রেণীবিভাজন করছি না, কিন্তু বাস কন্ডাক্টর বললেই আমাদের চোখের সামনে যে রাফ এন্ড টাফ , কাঁধে পয়সার ব্যাগ নিয়ে ঝনাত্ ঝনাত্ শব্দে ঘুরে বেড়ানো হম্বিতম্বি করা চেহারাগুলো ভেসে ওঠে সেরকম নয় আর কি ।
সকাল সাড়ে নটার বাসে উঠলেই দেখতে পেতাম সেই বুড়ো কন্ডাক্টর টাকে ।
চারিদিকে অন্য সব দূরপাল্লার বাসের হেল্পার-কন্ডাক্টররা তখন একযোগে রব তুলেছে ” জয়পুর-কোতুলপুর-বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুর-ওন্দা-সোনামুখী” …. অফিসটাইমে যাত্রী ধরার জন্য ভোকাল কর্ডের তোয়াক্কা রাখছেনা কেউই ।
অথচ, সেই বুড়োটা বাসের সামনে হেলান দিয়ে চোখ বুজে চা খেয়ে চলেছে লেড়ো বিস্কুট ডুবিয়ে । শুকনো লেড়ো বিস্কুট দিয়ে চা খেয়ে যে কেউ অমন স্বর্গীয় প্রশান্তি লাভ করতে পারে , তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না ।
আমি কাছে গিয়ে আলতো করে একটা ধাক্কা দেওয়াতে বোধহয় ওর সেই প্রশান্তি সাময়িকভাবে ভেঙে গেল । মুখে কিন্তু কোন বিরক্তির চিহ্ন নেই ।
“ও মশাই , এটা কি বিষ্ণুপুর যাবে ? ” জিজ্ঞেস করলাম কিছুটা সঙ্কোচের সাথেই ।
বুড়ো একটা স্বর্গীয় হাসি হেসে বলল ” কেন , বাসের গায়েই তো লেখা আছে!! দেখেননি ? “
আমি মনে মনে বললাম , দেখব না কেন …. তবে বাসের গায়ে লেখা দেখেই যদি সব প্যাসেঞ্জার কুচকাওয়াজ করতে করতে সিটে উঠে বসত , তাহলে আর বেচারা বাকি কন্ডাক্টর গুলোর অমন হেঁড়ে গলায় চেঁচানোর দরকার পড়তো কি ?
যাই হোক , বুড়োর যুক্তি অকাট্য । বৃথা বাক্যব্যয় না করে মাথা নেড়ে একটা “হুঁ ” বলে উঠে বসলাম ওর বাসেই ।
সাকুল্যে জনা পনেরো-কুড়ি লোক হয়েছে বাসে । ড্রাইভার আর ঐ বুড়োটা ছাড়া আর একটা বছর পনেরো-ষোলো এর বাচ্চা হেল্পার । অন্য সব বাসের অভিজ্ঞ এবং প্রবীণ হেঁড়ে গলার কন্ডাক্টরদের সঙ্গে সে পেরে উঠবে কেন !!
বাসে উঠে আলাপ জমাবার চেষ্টা করলাম বুড়োর সাথে । সত্যি বলতে কি , আবারও শ্রেণীবিভাজন না করেই বলছি , একজন কন্ডাক্টর হিসাবে ওর কথায় যে গভীরতা ও স্থিতধীর পরিচয় পেলাম , অনেক শহুরে শিক্ষিত লোকের কাছেও তা পাই না । মলম , তেল গছানোর চেষ্টা যে করিনি তা নয় … কিন্তু বুড়ো যখন জিজ্ঞেস করলো আমি নিজে ঐ তেল ব্যবহার করি কিনা, তখন তার কোন জবাব দিতে পারিনি ।
কেন , যদি জিজ্ঞেস করেন …বলতে পারব না।
তারপর থেকে কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম ঐ বুড়োর কথাবার্তায় । সকালে যখনই আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড এ এসে পোঁছাইনা কেন , ঐ সাড়ে নটার বাস ছিল আমার বাঁধা ।
বুড়োও ছিল ভারী অদ্ভুত । তখন ভাড়া ছিল সর্বোচ্চ ছয়/সাত টাকা । ভুলে যাবেননা আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগের কথা । তারই মধ্যে গ্রামের লোক প্রায়ই পঞ্চাশ পয়সা / এক টাকা ফাঁকি দিত বুড়োকে ।
প্রথমে ভাবতাম বুড়ো হিসাবে কাঁচা হয়তো , বা চোখে দেখে না । কিন্তু যেদিন দেখলাম একটা দশ জনের যাত্রাপার্টী তুলে একটা লোক আশি টাকার জায়গায় পাঁচ টা দশ টাকার নোট ছুঁড়ে চলে গেল , তখন বলতে বাধ্য হলাম
” ও মশাই আপনি ভাড়াটা দেখলেন না ? পঞ্চাশ টাকা দিয়ে চলে গেল যে !! “
বুড়ো তেমনি অমায়িক হাসি হেসে বলল ” দেখবনা কেনো ? “
আমি আরো অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম , ” তবে ?! আপনার কি টাকা বেশী পড়েছে ? আমাকেও ধার দিতে পারেন তো একটু !! “
এবার যেন বুড়ো একটু গম্ভীর হলো । একটু থেমে বলল ” গাঁয়ের লোকগুলো অনেক কষ্ট করে সিজনে একটা যাত্রা দেখতে পায় চাঁদা তুলে । বাসভাড়াতেই যদি আশি টাকা খরচ হয় , তাহলে আর থাকবেটা কি ? আমাদের দেশ গরীব বুঝলেন কমলেশ বাবু … দেশের মানুষগুলো যাতে আনন্দে থাকে তাই যথাসাধ্য চেষ্টা করি আমি । “
এরপর আমি আর কিছু বলতে পারিনি । গোটা ব্যাপারটাই ভারী অদ্ভুত আর অকল্পনীয় মনে হচ্ছিলো ।
সেদিন স্ট্যান্ডে সোজা ড্রাইভার টাকে ধরলাম একান্তে ।
” এই , তোমাদের বাস চলে কিকরে ?
লোক হয় না , কন্ডাক্টর টাকা ছেড়ে দেয় …. তোমাদের মালিক কি দাতব্য প্রতিষ্ঠান খুলেছে ?! “
ড্রাইভার টা ছোকরা । একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল প্রথমে । হয়তো এরকম প্রশ্ন তাকে আগে কেউ করেনি বলেই ।
একটু ভেবে বলল ” আমিও বুঝিনা বাবু কিকরে কি হয় ! কিন্তু মালিকের ছেলে কন্ডাক্টর কে খুব খাতির করে জানি । বিষ্ণুপুর এ প্রায়ই দেখা করতে আসে বাস থামলে । মনে হয় ও ই ম্যানেজ করে । আমায় তো মালিক কোনদিন কিছু বলে না !! নিজের মাইনে ও পাই ঠিকঠাক । “
সেদিনের পর আমি সংকল্প করলাম , জানতেই হবে ঐ বুড়ো কে ? এ কোন সাধারণ বাস কন্ডাক্টর হতেই পারে না ।
সেদিন বাস বিষ্ণুপুরে ফাঁকা হতেই চেপে ধরলাম বুড়োকে ।
“আপনি কে ? “
বুড়ো সেই অমায়িক হাসিটা হাসলো আবার । অন্য দিন ভারী ভাল লাগে ওর হাসিটা , আজ পিত্তি জ্বলে গেল দেখে ।
” আমি বাস কন্ডাক্টর , এই আমার পরিচয় “।
আমি তেতেই ছিলাম , ওর সেই উত্তর যেন অগ্নিতে ঘৃতাহুতির কাজ করল ।
কলার চেপে ধরলাম বুড়োর ” ইয়ার্কি পেয়েছেন আপনি ? আপনার বেশী পয়সা হয়েছে না ? … না আজ আমায় বলতেই হবে আপনি কে , নয়তো আমি চেঁচিয়ে লোক ডেকে হাজির করবো । “
কি আশ্চর্য , বুড়ো কিন্তু তাতেও রাগলো না ।
আস্তে করে জামার কলার থেকে আমার হাতটা সরিয়ে বলল ” রাগ হচ্ছে না খুব ? তা আপনার জায়গায় আমি থাকলে আমারও হতো , অস্বীকার করছিনা । আসলে কেউ তো কোনোদিন এসব জিজ্ঞাসা করেনি আমাকে , তাই আপনার এই অনুসন্ধিৎসা তে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম …… কি জানি কিছু ভুল করে ফেলিনি তো !! “
ততক্ষনে আমার রাগ কিছুটা প্রশমিত হয়েছে ।
“ জানতে না চাইলে জিজ্ঞাসা করবো কেন? আমি গোটা জেলার লোক চরিয়ে খাই । আপনি বাস কন্ডাক্টর এর গল্পে আমার চোখকে ধোঁকা দিতে পারবেন না । “
বুড়ো হেসে বললো আচ্ছা বেশ , আজ আপনার সব কৌতূহল দমন করবো । আজ রাতে আসুন লালবাঁধ এর উত্তর-পূর্ব পাড়ে । জায়গাটা একটু নির্জন , তবে ভয় পাবেন না । আপনি ঝুরো বটগাছতলায় এসে দাঁড়াবেন দশ টার সময় । আপনাকে নিয়ে যাবে । “
আমি তখন একপ্রকার বদ্ধপরিকর এই রহস্যের নিরসন করতে । অন্যসময় হলে জানিনা কি করতাম , তখন জেদের বসে বলে দিলাম “ হ্যাঁ আমি রাজি “ ।
…………………………………………..
সেদিন রাতের কথা। সময় মেনে আধঘন্টা আগেই এসেছি ঝুরো বটগাছতলার নিচে । চারিদিক নির্জন, আকাশে সাক্ষী খালি প্রতিপদের চাঁদ । দূরে দূরে মল্ল রাজাদের বানানো মন্দিরের চূড়াগুলো সেই আলো ছায়ার মায়াবী পরিবেশে যেন স্তব্ধ হয়ে থেমে আছে । তন্ময় হয়ে গিয়েছিলাম নিজের ভাবনাতেই ।
হঠাৎ চটক ভাঙলো একটা ডাক শুনে “ আপনি কমলেশবাবু তো ? “
মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।
দেখি পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত সৌম্যদর্শন এক বছর তিরিশের যুবক দাঁড়িয়ে সামনে ।
রহস্যের উপর রহস্য । এ আবার কে রে বাবা !!
“ আমি জয়ন্ত “ , বললো সে ।
“ বাস মালিকের ছেলে বললে হয়তো আপনার চিনতে সুবিধে হবে “ হাসতে হাসতে বলে জয়ন্ত।
“ চলুন বুড়োবাবা অপেক্ষা করছেন “ ।
নির্বাক কলের পুতুলের মতোই চলতে থাকলাম ওর সাথে। আমার হৃৎস্পন্দন তখন শুনতে পাচ্ছি নিজের কানেই। প্রতিটি মুহূর্ত কেও যেন মনে হচ্ছে এক যুগ ।
অবশেষে এসে পৌঁছলাম সেই উত্তর-পূর্ব পাড়ে।
ছোট্ট কুঁড়েঘর বেড়া দেয়া , সামনে নিকোনো উঠোন ।
“ বসুন এখানে” । উঠোনের একটা জায়গায় আসন পেতে দিলো জয়ন্ত।
“ বুড়োবাবা আসছেন”। বলে ভিতরে চলে গেল সে ।
আমার উল্টোদিকে দেখি পাশাপাশি দুটো আসন পাতা । মনে মনে ভয় করতে লাগলো। এ কাদের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা, তন্ত্রমন্ত্র ধারী সাধক নয় তো !! হয়তো আমার করোটি তে একটু পরেই চা খাবে এরা !!!
ভয় পেলে এমনই হয় মানুষের, অস্বাভাবিক কিছু নয়। সিঁটিয়ে বসে রইলাম কোনদিকে না চেয়ে।
“ এই যে কমলেশ , এসে গেলেন তাহলে “ ।
অতি পরিচিত ডাক টা শুনেই হৃৎপিন্ড যেন গলার কাছে উঠে এলো।
ভয়ে ভয়ে তাকালাম। ভেবেছিলাম লাল টকটকে গরদ আর রক্ততিলক পরিহিত কোনো তান্ত্রিক কেই দেখবো বুঝি।
কিন্তু একি !!!!!!!
এ কি দেখছি ? ইনিই বাসের কন্ডাক্টর ?!!
এক শুভ্রকেশ সৌম্যকান্তি বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন আমার সামনে । পরনে ধবধবে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি , কপালে চন্দনের তিলক , গলায় রজনীগন্ধার মালা ।
সব মিলিয়ে এক অসামান্য পবিত্রতার মূর্ত প্রতীক ।
“ আপনি ….. আপনি কে ? “
মুখ দিয়ে কথা সরছিলো না আমার ।
“ উত্তর টা আমিই দিচ্ছি । “ বলতে বলতে প্রবেশ করে জয়ন্ত ।
“ ইনি পন্ডিত সত্যনারায়ণ বন্দোপাধ্যায়। বিষ্ণুপুর ঘরানার কিংবদন্তি সেতার বাদক পন্ডিত রামপ্রসন্ন বন্দোপাধ্যায় এর শিষ্য ইনি।
এনার নাম আপনি কেন কেউই শোনেননি , কারণ ইনি কোনোদিন প্রচারের আলোয় আসতে চাননি । ইনি একবার….. “
মাঝপথেই জয়ন্ত কে থামিয়ে দেন পন্ডিতজী।
“ থাক থাক জয়ন্ত , জানি তোমার জিহ্বায় সরস্বতী , কিন্তু এই বুড়োটার অহেতুক গুণকীর্তন করে তাঁকে ব্যতিব্যস্ত কোরো না । “
আমার দিকে তাকান পন্ডিতজী, “ ওসব কিছু নয় কমলেশবাবু , আমি একজন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ । আপনি রোজ সকালে বাস এ যে বুড়ো কন্ডাক্টরটাকে দেখেন , আমার আসল পরিচয় সেটাই । “
আমি তখন স্তম্ভিত হতবাক ….. মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতার মতো বসে আছি।
“ কই হে জয়ন্ত , দাও দেখি আমার অর্ধাঙ্গিনী কে । “
জয়ন্তর হাত থেকে সেতারটা কোলে তুলে নেন পন্ডিতজী। মৃদুতানে বাজাতে বাজাতে সুরের লহরী তোলেন। ধীরে ধীরে ….. একাত্ম হয়ে যান মুদিত চোখে।
এবার জয়ন্তও তার গলা ছাড়ে।
“ প্রভু ম্যায় গুলাম ,ম্যায় গুলাম, ম্যায় গুলাম তেরা …. “
গুরু-শিষ্য দুজনেরই চক্ষু নিমীলিত । দরদর করে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ে জয়ন্তর চোখ বেয়ে ।
আর আমি ?
আমি তখন দেশ-কাল-সীমানার সমস্ত বাহ্য জ্ঞান হারিয়েছি । সেতার আর সঙ্গীতের সেই ঐশী যুগলবন্দি অবশ করে দিয়েছে আমার সমগ্র চেতনাকে ; সুরবিন্যাস ঝংকার তোলে আমার প্রাণের তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে ।
সেই মুহূর্ত …. অনাদি, অক্ষয় ।
…………………………………………
এর এক মাস পর আমি বদলি হয়ে যাই মেদিনীপুর জেলায় । সেই শেষ একমাস আমি আর সাড়ে নটার বাসে চাপতাম না …. এক অজানা ভয় মেশানো শ্রদ্ধা আর সম্ভ্রম এ ভারাক্রান্ত ছিল আমার মন ।
আজ কুড়ি বছর পরে বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী জয়ন্ত সিংহরায় এর ফাংশন এর পোষ্টার টা দেখে যেন এক লহমায় জীবনের একটা মুহূর্ত এসে ধরা দিলো আবারো..
আজো চোখ বুজলে শুনতে পাই সেই অলৌকিক সুরমুর্চ্ছনা ।
সেই আমার কল্পতরুর অমৃত-ফল।।